দুনিয়াতে
ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য বিপর্যয়ের কারণঃ
Bismillahir Rahmanir Rahim
"যদি
আল্লাহ তার সকল বান্দাকে প্রচুর রিযিক দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি
করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের
খবর রাখেন ও সবকিছু দেখেন"
১. সূরার নাম-সূরা শূরা
২. সূরা নং-৪২
৩. আয়াত নং-২৭
৪. পৃষ্ঠা-৪৮৭ (হাফিজি কোরআন)
৫. পারা-২৫
৬. তাফসীর পৃষ্ঠা-১২১৬ (তাফসীরে মাআরিফুল কোরআন)
আয়াতে বলা
হয়েছে যে, দুনিয়ার সব মানুষকে সব রকম রিযিক ও নেয়ামত প্রচুর পরিমাণে দেয়া হলে
তাদের পারস্পরিক হানাহানি সীমা ছাড়িয়ে যেত। কারণ ধন-সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে কেউ
কারও মুখাপেক্ষী থাকত না এবং কেউ কারও কাছে নতী স্বীকার করত না। অপরদিকে ধনাঢ্যতার
এক বৈশিষ্ট্য এই যে, ধন যতই বাড়ে, লোভ-লালসাও ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে এর
অপরিহার্য পরিণতি দাঁড়াত এই যে, একে অপরের সম্পত্তি করায়াত্ত করার জন্যে জোরজবরদস্তির
প্রয়োগ ব্যাপক হয়ে যেত। মারামরি-কাটাকাটি ও অন্যান্য কুকর্ম সীমা ছাড়িয়ে যেত। তাই
আল্লাহ্ তাআলা সব মানুষকে সব রকম নেয়ামত না দিয়ে এভাবে বন্টন করেছেন যে, কাউকে ধন
সম্পদ বেশী দিয়েছেন, কাউকে স্বাস্থ্য ও শক্তি অধিক পরিমাণে যুগিয়েছেন, কাউকে রূপ ও
সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং কাউকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অপরের তুলনায় বেশী
সরবরাহ করেছেন। ফলে প্রত্যেকেই কোন না কোন বিষয়ে অপরের মুখাপেক্ষী এবং এই
পারস্পারিক মুখাপেক্ষিতার উপরই সভ্যতার ভীত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
"ইন্নাহু
বি-ইবাদিহী খবিরুম্ বাছির" বাক্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআ'লা সম্যক
জানেন কার জন্য কোন নেয়ামত উপযুক্ত এবং কোন নেয়ামত ক্ষতিকর। তাই তিনি প্রত্যেককে
তার উপযোগী নেয়ামত দান করেছেন। তিনি যদি কারও কাছ থেকে কোন নেয়ামত ছিনিয়ে নেন, তবে
সমগ্র বিশ্বের উপযোগিতার ভিত্তিতেই ছিনিয়ে নেন। এটা মোটেই জরুরী নয় যে, আমরা
প্রত্যেক ব্যক্তি উপযোগিতা বুঝতে সক্ষম হব। কারণ এখানে প্রত্যেকেই তার জ্ঞানের এক
সীমিত পরিধির মধ্যে চিন্তা-ভাবনা করে। আর আল্লাহ্ তাআ'লার সামনে রয়েছে সমগ্র
বিশ্বজগতের অন্তহীন উপযোগিতার ক্ষেত্র। কাজেই তাঁর সমস্ত রহস্য অবগত হওয়া মানুষের পক্ষে
সম্ভবপর নয়। এর একটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দৃষ্টান্ত এই যে, একজন ন্যায়পরায়ন
রাষ্ট্রপ্রধান মাঝে মাঝে ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থের পরিপন্থী নির্দেশও জারি করেন।
ফলে তারা বিপদাপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। বিপদে পতিত ব্যক্তি যেহেতু নিজ স্বার্থের
সীমিত গণ্ডিতে থেকে চিন্তা করে, তাই রাষ্ট্রপ্রধানের এই পদক্ষেপ তার দৃষ্টিতে
অযৌক্তিক ও অসমীচীন প্রতিপন্ন হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু যার দৃষ্টি গোটা দেশ ও জাতির
প্রতি নিবদ্ধ এবং যে মনে করে যে, ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে
গোটা দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দেয়া যায় না, সে এই পদক্ষেপকে মন্দ্র বলতে পারেনা।
অতএব, যে সত্তা সমগ্র বিশ্বজগত পরিচালনা করছেন, তাঁর প্রজ্ঞা ও রহস্য মানুষ কিরুপে
পুরোপুরি বুঝতে সক্ষ হবে? এই দৃষ্টিকোণে চিন্তা করলে কোন ব্যক্তিকে বিপদাপদে পতিত
দেখে মনে যেসব কুধারণা ও জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হয়, সেগুলো আপনা আপনিই উরে যেতে
পারে।
এ আয়াত থেকে
আরও জানা যায় যে, বিশ্বের সব মানুষই সমান ধন-সম্পদের অধিকারী হোক এটা সম্ভবপর নয়,
কাম্যও নয় এবং বিশ্ব ব্যবস্থাপনার সৃষ্টিগত উপযোগিতাও এর পক্ষে নয়।
আল্লাহ্
আমাদের বোঝার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।